শেখ হাসিনার ১৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের দাবি

শেখ হাসিনার ১৪০০ বার মৃত্যুদণ্ডের দাবি

বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা। গত বছর শিক্ষার্থী-নেতৃত্বাধীন আন্দোলনে প্রাণঘাতী দমনপীড়নের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে এ দাবি তোলা হয়েছে— যে আন্দোলনের পরই তিনি ক্ষমতা হারান।

ভারতে পালিয়ে থাকা হাসিনার বিরুদ্ধে বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার চলছে। ফাঁস হওয়া একটি অডিও ক্লিপে শোনা গেছে, তিনি নিরাপত্তা বাহিনীকে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার” করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে হাসিনা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

দীর্ঘ কয়েক সপ্তাহের অস্থিরতায় প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়— যা ছিল ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা।

রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “হাসিনা ১,৪০০টি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য। কিন্তু যেহেতু তা বাস্তবে সম্ভব নয়, তাই অন্তত একটি মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “তার লক্ষ্য ছিল নিজে এবং তার পরিবার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকা। তিনি এক নিষ্ঠুর অপরাধীতে পরিণত হয়েছেন এবং নিজের নৃশংসতার জন্য কোনো অনুতাপ দেখাননি।”

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়। তবে দ্রুত তা শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দাবিতে সারাদেশে গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

বিবিসির এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৫ আগস্ট ছিল সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী দিন— সেদিনই শেখ হাসিনা হেলিকপ্টারে করে দেশ ত্যাগ করেন, আর পরক্ষণেই জনতা ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে হামলা চালায়। ওইদিন রাজধানীর এক ব্যস্ত এলাকায় পুলিশ কমপক্ষে ৫২ জনকে হত্যা করে— যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পুলিশি হত্যাকাণ্ডগুলোর একটি।

রাষ্ট্রনিযুক্ত হাসিনার আইনজীবী যুক্তি দেন, বিক্ষোভকারীরা সহিংস হয়ে উঠেছিল বলে পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালায়।

এই মামলায় হাসিনার সঙ্গে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও অভিযুক্ত করা হয়েছে। কামালের বিরুদ্ধেও মৃত্যুদণ্ড দাবি করেছে রাষ্ট্রপক্ষ; তিনি বর্তমানে পলাতক। চৌধুরী গত জুলাইয়ে দোষ স্বীকার করেছেন, তবে এখনো তার সাজা ঘোষণা করা হয়নি।

এর আগে শেখ হাসিনাকে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে পৃথকভাবে দুর্নীতির অভিযোগও রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *